কক্সবাজার ১১:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাত্রজনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে অস্ত্র যোগানদাতা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল

নিজস্ব সংবাদদাতা :
  • আপডেট সময় ০৯:২৬:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৫০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কক্সবাজারে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থান গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যুবলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল। অভিযোগ রয়েছে, অস্ত্র যোগানদাতাদের মধ্যে সে অন্যতম। আওয়ামী লীগের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় ফয়সালের খোঁজে পাচ্ছে না প্রশাসন। আত্মগোপনে থাকলেও অনুগামীদের দিয়ে অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করছে। স্বৈরাচারের দোসররা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে নানা পরিকল্পনায় এগোচ্ছে। আইনশৃঙ্খলার ক্ষতি হয় এমন ষড়যন্ত্রের ছক আঁকছে।

 

আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল কক্সবাজার পৌরসভা ৪ নং ওয়ার্ডের পেশকার পাড়ার হাজী ফরিদ আলমের ছেলে।

 

গত ১০ অক্টোবর সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলায় সে (যার নং-৩০/৬৬৫) এজাহারভুক্ত আসামি।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল যুবলীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে মাত্র টাকায় কক্সবাজার ইউনিয়ন হসপিটালের ডিএমডি পদ বাগিয়ে নেন। অবৈধ কর্তৃত্বে হাসপাতালকে জিম্মি করার আগে। আয়া-নার্স থেকে শুরু করে অনেকেই তার কুকর্মের সাক্ষী। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অবৈধ ব্যবহারের কারণে ভুক্তভোগীরা কথা বলতে সাহস পায়নি। সময়ের পরিবর্তনে এখন সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছে। ফয়সালের মত স্বৈরাচারের দোসরদের কুকর্মের ফিরিস্তি বের হচ্ছে।

 

বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, ফ্যাসিস্ট প্রশাসনের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের নারী সাপ্লাইয়ার হিসেবে ফয়সাল অধিক পরিচিত। প্রশাসনের বিভিন্ন মানুষের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চাঁদাবাজি করতো।

 

তার এসব চাঁদাবাজি থেকে রক্ষা পায়নি খোদ তার নিজের প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন হাসপাতাল পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। সেখানেও ওষুধ কোম্পানি, ফার্মেসি, ডিউটি ডাক্তারগন তার চাঁদাবাজির শিকার।

 

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারনের জন্য দাবি জানিয়ে আসে বিভিন্ন শ্রেনিপেশার মানুষ।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন হাসপাতালের ভূক্তভোগীরা জানান,   নারী নার্সদেরকে বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাব দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করে ফয়সাল।

প্রস্তাবে রাজি না হলে প্রতিষ্ঠানে তাদের উপর চালানো হতো নানান হেনস্তা। অনেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা গ্রহন না করায় স্বেচ্ছায় চাকরিও ছেড়েছেন। কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে জোরপূর্বক চাকরিচ্যূতও হয়েছেন অনেকে।

 

ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি যুবলীগ নেতা ইশতিয়াক আহমেদ জয় এ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে থাকায় তার অন্যতম সহযোগী যুবলীগ নেতা ফয়সাল তার অপকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগ সাবেক ও বর্তমান কর্মরতদের।

 

হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা ও কর্মীবান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং নারী কর্মীদের হেনস্তা বন্ধে ফয়সালের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি সংশ্লিষ্টদের।

 

ফয়সালের নানা অপকর্ম দেখেছেন এমন কয়েকজন ব্যক্তি জানান, প্রশাসনের কিছু সাধু কর্মকর্তা ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদ আদায় করতো। চাঁদা না দিলে মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির হুমকি প্রদান করতো ফয়সাল।

 

হাসপাতালের পলাতক চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমদ জয়ের কক্ষে মদের আড্ডা বসানো, বিভিন্ন জায়গায় নারী সরবরাহসহ নানা অপকর্ম করতো ফয়সাল। ওই কক্ষে নারি কেলেঙ্কারিতে একবার ধরাও পড়ে।

 

সে সময়কালে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন আকস্মিক হাসপাতাল পরিদর্শনে গেলে চেয়ারম্যানের কক্ষে টেবিলের উপর পা রেখে ধূমপান করতে দেখেন।

 

ওইদিনই হাসপাতালের সিটি স্ক্যান, আইসিইউ এবং ওটি বন্ধ করে দেয়।

 

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ইউনিয়ন হাসপাতালের ডিএমডি দায়িত্ব পালনকালে ফয়সালের হাতে নাজেহাল ও শ্লিলতাহানির শিকার হয় অনেক নারী। বাদ যায়নি আয়া থেকে নার্সরাও।

এত অপরাধ কর্মের পরও হাসপাতালের ডিএমপি পদে কেমনে বহাল হয়েছে ফয়সাল? প্রশ্ন সবার।

 

বর্তমান যারা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব রয়েছেন তাদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ বলে জানিয়েছে অনেকে।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জড়িত বেশ কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুল্লাহ ফয়সাল আন্দোলন বিরুদ্ধে সশস্ত্র নেতৃত্ব দেয়। ছাত্রদের উপর গুলি বর্ষণ করে। হাসপাতালের যে সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাত্রদের আন্দোলন প্রতি সমর্থন জানাতো তাদেরকে চাকুরিচ্যুতিসহ নানাভাবে হয়রানী করতো।

 

আব্দুল্লাহ আল ফয়সালের মত অপরাধীদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি কক্সবাজারবাসির।

 

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে আব্দুল্লাহ আল ফয়সালকে অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনটিও বন্ধ।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ছাত্রজনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে অস্ত্র যোগানদাতা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল

আপডেট সময় ০৯:২৬:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কক্সবাজারে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থান গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যুবলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল। অভিযোগ রয়েছে, অস্ত্র যোগানদাতাদের মধ্যে সে অন্যতম। আওয়ামী লীগের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় ফয়সালের খোঁজে পাচ্ছে না প্রশাসন। আত্মগোপনে থাকলেও অনুগামীদের দিয়ে অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করছে। স্বৈরাচারের দোসররা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে নানা পরিকল্পনায় এগোচ্ছে। আইনশৃঙ্খলার ক্ষতি হয় এমন ষড়যন্ত্রের ছক আঁকছে।

 

আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল কক্সবাজার পৌরসভা ৪ নং ওয়ার্ডের পেশকার পাড়ার হাজী ফরিদ আলমের ছেলে।

 

গত ১০ অক্টোবর সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলায় সে (যার নং-৩০/৬৬৫) এজাহারভুক্ত আসামি।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল যুবলীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে মাত্র টাকায় কক্সবাজার ইউনিয়ন হসপিটালের ডিএমডি পদ বাগিয়ে নেন। অবৈধ কর্তৃত্বে হাসপাতালকে জিম্মি করার আগে। আয়া-নার্স থেকে শুরু করে অনেকেই তার কুকর্মের সাক্ষী। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অবৈধ ব্যবহারের কারণে ভুক্তভোগীরা কথা বলতে সাহস পায়নি। সময়ের পরিবর্তনে এখন সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছে। ফয়সালের মত স্বৈরাচারের দোসরদের কুকর্মের ফিরিস্তি বের হচ্ছে।

 

বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, ফ্যাসিস্ট প্রশাসনের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের নারী সাপ্লাইয়ার হিসেবে ফয়সাল অধিক পরিচিত। প্রশাসনের বিভিন্ন মানুষের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চাঁদাবাজি করতো।

 

তার এসব চাঁদাবাজি থেকে রক্ষা পায়নি খোদ তার নিজের প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন হাসপাতাল পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। সেখানেও ওষুধ কোম্পানি, ফার্মেসি, ডিউটি ডাক্তারগন তার চাঁদাবাজির শিকার।

 

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারনের জন্য দাবি জানিয়ে আসে বিভিন্ন শ্রেনিপেশার মানুষ।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন হাসপাতালের ভূক্তভোগীরা জানান,   নারী নার্সদেরকে বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাব দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করে ফয়সাল।

প্রস্তাবে রাজি না হলে প্রতিষ্ঠানে তাদের উপর চালানো হতো নানান হেনস্তা। অনেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা গ্রহন না করায় স্বেচ্ছায় চাকরিও ছেড়েছেন। কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে জোরপূর্বক চাকরিচ্যূতও হয়েছেন অনেকে।

 

ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি যুবলীগ নেতা ইশতিয়াক আহমেদ জয় এ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে থাকায় তার অন্যতম সহযোগী যুবলীগ নেতা ফয়সাল তার অপকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগ সাবেক ও বর্তমান কর্মরতদের।

 

হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা ও কর্মীবান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং নারী কর্মীদের হেনস্তা বন্ধে ফয়সালের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি সংশ্লিষ্টদের।

 

ফয়সালের নানা অপকর্ম দেখেছেন এমন কয়েকজন ব্যক্তি জানান, প্রশাসনের কিছু সাধু কর্মকর্তা ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদ আদায় করতো। চাঁদা না দিলে মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির হুমকি প্রদান করতো ফয়সাল।

 

হাসপাতালের পলাতক চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমদ জয়ের কক্ষে মদের আড্ডা বসানো, বিভিন্ন জায়গায় নারী সরবরাহসহ নানা অপকর্ম করতো ফয়সাল। ওই কক্ষে নারি কেলেঙ্কারিতে একবার ধরাও পড়ে।

 

সে সময়কালে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন আকস্মিক হাসপাতাল পরিদর্শনে গেলে চেয়ারম্যানের কক্ষে টেবিলের উপর পা রেখে ধূমপান করতে দেখেন।

 

ওইদিনই হাসপাতালের সিটি স্ক্যান, আইসিইউ এবং ওটি বন্ধ করে দেয়।

 

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ইউনিয়ন হাসপাতালের ডিএমডি দায়িত্ব পালনকালে ফয়সালের হাতে নাজেহাল ও শ্লিলতাহানির শিকার হয় অনেক নারী। বাদ যায়নি আয়া থেকে নার্সরাও।

এত অপরাধ কর্মের পরও হাসপাতালের ডিএমপি পদে কেমনে বহাল হয়েছে ফয়সাল? প্রশ্ন সবার।

 

বর্তমান যারা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব রয়েছেন তাদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ বলে জানিয়েছে অনেকে।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জড়িত বেশ কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুল্লাহ ফয়সাল আন্দোলন বিরুদ্ধে সশস্ত্র নেতৃত্ব দেয়। ছাত্রদের উপর গুলি বর্ষণ করে। হাসপাতালের যে সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাত্রদের আন্দোলন প্রতি সমর্থন জানাতো তাদেরকে চাকুরিচ্যুতিসহ নানাভাবে হয়রানী করতো।

 

আব্দুল্লাহ আল ফয়সালের মত অপরাধীদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি কক্সবাজারবাসির।

 

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে আব্দুল্লাহ আল ফয়সালকে অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনটিও বন্ধ।