কক্সবাজার ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল গণতন্ত্রের কবর রচনা : অ্যাটর্নি জেনারেল

পঞ্চদশ সংশোধনীর লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র ধ্বংস করা

নিজস্ব সংবাদদাতা :
  • আপডেট সময় ০১:২৪:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক নিউজ :

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে, মৌলিক অধিকার ধ্বংস করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে দেশে যে ক’টি নির্বাচন হয়েছে, তা বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেয়ারটেকার বাতিল করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। সংবিধানের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীকে মানুষের অধিকার হরণের পদক্ষেপ উল্লেখ করে এটিকে ‘কালারঅ্যাবল লেজিসলেশন’ বলে অভিহিত করেন তিনি।

গতকাল বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের শুনানিতে এ কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
শুনানি শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে বলেছি পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরো স্কিমটাই ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করা। ফ্যাসিজমকে দীর্ঘায়িত করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মাধ্যমে অর্জিত যে বাংলাদেশ, সেটিকে ধ্বংস করা। তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এমন প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে এর মাধ্যমে দেশের রুল অফ ল, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র সব কিছু মূল্যহীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এটি সংবিধানের ওপর প্রতারণার শামিল।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের অংশ হিসেবে রাখা যাবে না। পঞ্চদশ সংশোধনী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ’৯০-এর গণ-অভ্যুত্থান ও ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল না হলে আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে এটা না যে হাজার হাজার মানুষকে গুম করা হবে, ৬০ লাখের বেশি মানুষকে গায়েবি মামলার আসামি করা হবে, বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হবে। যাদের হাত নেই এরকম মানুষকেও আসামি করে বলা হয়েছে তারা বোমা মেরেছেন। হজে থাকা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এসব হতে পারে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানের ৭খ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সংবিধানের মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র না। আমরা সমাজতন্ত্র বাদ চাচ্ছি। শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে কেউ অস্বীকার করে না। তবে জাতির পিতা নিয়ে সিরিয়াস বিতর্ক আছে। জাতি বিভক্ত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৈরি করা সংবিধানে জাতির পিতা ছিল না। এটি পঞ্চদশ সংশোধনীতে ঢুকানো হয়েছে। জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। জাতির পিতা বলা সংবিধানের স্পিরিটের পরিপন্থী। তিনি বলেন, সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদ বাতিল চাচ্ছি। এটার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে ভাষা দিয়ে জাতিসত্তা নির্ধারণ করা হয় না। ৭ক ও ৭খ অনুচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য, গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশে স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য করা হয়েছে। এটি আইনের শাসনের পরিপন্থী।
অনুচ্ছেদের ৮-এর বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটা রাখার দরকার নেই। এই দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান। আগে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল। এটি যেভাবে আগে ছিল সেভাবে চাচ্ছি। আর ২ক তেই বলা আছে রাষ্ট্র সকল ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমান অধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিত করবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাতিলটা গণতন্ত্রের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। রায়ের জন্যও অপেক্ষা করেনি। ১২৩ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্য বহাল রেখে আবার নির্বাচন করা অবৈধ। এটা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে আঘাত করে।
সংবিধানে জাতির পিতার বিষয়ে তিনি বলেন, এই প্রশ্নে বলেছি, এখানেও আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ওনার অবদান অনস্বীকার্য। রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে উনি অনেক উপরের মানুষ। কিন্তু একজন ব্যক্তি সব কিছু করেছেন- এটা আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার ধারণা নয়। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, উই দ্য পিপল অব বাংলাদেশ। আমরা সবাই স্বাধীন হয়েছি। এ কথা ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে আপিল বিভাগ বলেছে। ‘উইনেস’ থেকে সরে এসে আমরা ‘আইনেস’ এবং বায়োপিক থিউরিতে গেছি। এটা আমাদের যেখানে নিয়ে যাচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে যে জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, সেটা কাক্সিক্ষত না। আমাদের দেশ রাষ্ট্র সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা একক শব্দ ইস্যু নয়, ইস্যু হলো ওনাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জন্য এবং যেভাবে করেছেন; মুক্তিযুদ্ধে তার কৃতিত্বটাকেও ধ্বংস করার জন্য ওনারা দায়ী।
সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধ এবং সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্যসংক্রান্ত অনুচ্ছে ৭ ক ও খ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, গণতন্ত্রকে হত্যা, সঙ্কুচিত ও নির্বাসিত করার জন্য এই ৭ ক ও খ করা হয়েছে। মানুষকে ভয়ের সংস্কৃতি ও কণ্ঠরুদ্ধ করা। গণভোট নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনগণের মতপ্রকাশের গণভোটের বিধান বিলোপ করে কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের এই বিধান তুলে দেয়া হয়েছিল, আমরা গণভোটের এই বিধানটি বহাল চাই। যারা নিশিরাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে এমপি হয়েছিলেন, তাদের ভোটে এই বিধান বাতিল হয়।

মানুষের প্রত্যাশা আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধানের অংশ হোক : জামায়াতের আইনজীবী
শুনানিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, মানুষের প্রত্যাশা হলো আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ^াস সংবিধানের অংশ হোক। ৭ক ও ৭খ অনুচ্ছেদ সংবিধানের অংশ করার মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়েছে। সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করা হয়েছে। এমন একটি সংশোধনী করা হয়েছে, যার মাধ্যমে একটির সাথে আরেকটি মেলানো সম্ভব হয় না। এক পার্ট রাখলে আরেক পার্টকে বাদ দিতে হয়। এ জন্য এটিকে কখনোই সাংবিধানিক সংশোধনী বলা যাবে না। এটি শুধু একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার একটা মাধ্যম মাত্র।
গতকাল শুনানি অসমাপ্ত অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের ওপর শুনানি চলছে। এই রুল শুনানিতে দল হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী যুক্ত হয়েছে।
পঞ্চদশ সংশোধনী আইনে (২০১১) বিভিন্ন বিষয়ের সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল গণতন্ত্রের কবর রচনা : অ্যাটর্নি জেনারেল

পঞ্চদশ সংশোধনীর লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র ধ্বংস করা

আপডেট সময় ০১:২৪:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

ডেস্ক নিউজ :

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে, মৌলিক অধিকার ধ্বংস করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে দেশে যে ক’টি নির্বাচন হয়েছে, তা বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেয়ারটেকার বাতিল করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। সংবিধানের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীকে মানুষের অধিকার হরণের পদক্ষেপ উল্লেখ করে এটিকে ‘কালারঅ্যাবল লেজিসলেশন’ বলে অভিহিত করেন তিনি।

গতকাল বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের শুনানিতে এ কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
শুনানি শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে বলেছি পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরো স্কিমটাই ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করা। ফ্যাসিজমকে দীর্ঘায়িত করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মাধ্যমে অর্জিত যে বাংলাদেশ, সেটিকে ধ্বংস করা। তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এমন প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে এর মাধ্যমে দেশের রুল অফ ল, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র সব কিছু মূল্যহীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এটি সংবিধানের ওপর প্রতারণার শামিল।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের অংশ হিসেবে রাখা যাবে না। পঞ্চদশ সংশোধনী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ’৯০-এর গণ-অভ্যুত্থান ও ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল না হলে আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে এটা না যে হাজার হাজার মানুষকে গুম করা হবে, ৬০ লাখের বেশি মানুষকে গায়েবি মামলার আসামি করা হবে, বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হবে। যাদের হাত নেই এরকম মানুষকেও আসামি করে বলা হয়েছে তারা বোমা মেরেছেন। হজে থাকা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এসব হতে পারে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানের ৭খ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সংবিধানের মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র না। আমরা সমাজতন্ত্র বাদ চাচ্ছি। শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে কেউ অস্বীকার করে না। তবে জাতির পিতা নিয়ে সিরিয়াস বিতর্ক আছে। জাতি বিভক্ত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৈরি করা সংবিধানে জাতির পিতা ছিল না। এটি পঞ্চদশ সংশোধনীতে ঢুকানো হয়েছে। জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। জাতির পিতা বলা সংবিধানের স্পিরিটের পরিপন্থী। তিনি বলেন, সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদ বাতিল চাচ্ছি। এটার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে ভাষা দিয়ে জাতিসত্তা নির্ধারণ করা হয় না। ৭ক ও ৭খ অনুচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য, গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশে স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য করা হয়েছে। এটি আইনের শাসনের পরিপন্থী।
অনুচ্ছেদের ৮-এর বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটা রাখার দরকার নেই। এই দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান। আগে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল। এটি যেভাবে আগে ছিল সেভাবে চাচ্ছি। আর ২ক তেই বলা আছে রাষ্ট্র সকল ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমান অধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিত করবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাতিলটা গণতন্ত্রের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। রায়ের জন্যও অপেক্ষা করেনি। ১২৩ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্য বহাল রেখে আবার নির্বাচন করা অবৈধ। এটা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে আঘাত করে।
সংবিধানে জাতির পিতার বিষয়ে তিনি বলেন, এই প্রশ্নে বলেছি, এখানেও আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ওনার অবদান অনস্বীকার্য। রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে উনি অনেক উপরের মানুষ। কিন্তু একজন ব্যক্তি সব কিছু করেছেন- এটা আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার ধারণা নয়। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, উই দ্য পিপল অব বাংলাদেশ। আমরা সবাই স্বাধীন হয়েছি। এ কথা ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে আপিল বিভাগ বলেছে। ‘উইনেস’ থেকে সরে এসে আমরা ‘আইনেস’ এবং বায়োপিক থিউরিতে গেছি। এটা আমাদের যেখানে নিয়ে যাচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে যে জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, সেটা কাক্সিক্ষত না। আমাদের দেশ রাষ্ট্র সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা একক শব্দ ইস্যু নয়, ইস্যু হলো ওনাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জন্য এবং যেভাবে করেছেন; মুক্তিযুদ্ধে তার কৃতিত্বটাকেও ধ্বংস করার জন্য ওনারা দায়ী।
সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধ এবং সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্যসংক্রান্ত অনুচ্ছে ৭ ক ও খ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, গণতন্ত্রকে হত্যা, সঙ্কুচিত ও নির্বাসিত করার জন্য এই ৭ ক ও খ করা হয়েছে। মানুষকে ভয়ের সংস্কৃতি ও কণ্ঠরুদ্ধ করা। গণভোট নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনগণের মতপ্রকাশের গণভোটের বিধান বিলোপ করে কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের এই বিধান তুলে দেয়া হয়েছিল, আমরা গণভোটের এই বিধানটি বহাল চাই। যারা নিশিরাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে এমপি হয়েছিলেন, তাদের ভোটে এই বিধান বাতিল হয়।

মানুষের প্রত্যাশা আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধানের অংশ হোক : জামায়াতের আইনজীবী
শুনানিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, মানুষের প্রত্যাশা হলো আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ^াস সংবিধানের অংশ হোক। ৭ক ও ৭খ অনুচ্ছেদ সংবিধানের অংশ করার মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়েছে। সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করা হয়েছে। এমন একটি সংশোধনী করা হয়েছে, যার মাধ্যমে একটির সাথে আরেকটি মেলানো সম্ভব হয় না। এক পার্ট রাখলে আরেক পার্টকে বাদ দিতে হয়। এ জন্য এটিকে কখনোই সাংবিধানিক সংশোধনী বলা যাবে না। এটি শুধু একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার একটা মাধ্যম মাত্র।
গতকাল শুনানি অসমাপ্ত অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের ওপর শুনানি চলছে। এই রুল শুনানিতে দল হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী যুক্ত হয়েছে।
পঞ্চদশ সংশোধনী আইনে (২০১১) বিভিন্ন বিষয়ের সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন।