কক্সবাজার ১২:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কপ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ড. ইউনূস

পৃথিবীর সুরক্ষায় ৩ শূন্যের জীবনধারা গড়তে হবে

নিজস্ব সংবাদদাতা :
  • আপডেট সময় ০১:২৯:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক নিউজ :

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন।
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে গতকাল কপ২৯-এর ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন। ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সভ্যতা এখন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ আমরা আত্মবিধ্বংসী মূল্যবোধ প্রচার করছি। একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের জন্য আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, অর্থনৈতিক এবং তারুণ্যের শক্তিকে একত্রিত করতে হবে; একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান সভ্যতা তৈরি করতে হবে। আমরা এই গ্রহের মানবসন্তানরাই গ্রহের ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠেছি এবং আমরা স্বেচ্ছায় এ কাজ করছি। আমরা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছি, যা পরিবেশবান্ধব নয়। আর এর পেছনে যুক্তি হিসেবে আমরা অর্থনৈতিক অবকাঠামোর কথা বলি, যাকে দিন-রাত, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মতোই প্রাকৃতিক একটি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অথচ এই অর্থনৈতিক কাঠামো সীমাহীন ভোগের ওপর নির্ভরশীল। আপনি যত বেশি ভোগ করবেন, তত বড় হবেন। আপনি যত বড় হবেন, তত বেশি উপার্জন করবেন। সর্বোচ্চ মুনাফা আয়ই এই কাঠামোর ভিত্তি, যার মাধ্যমে এর ভেতর সবাই তাদের ভূমিকা পালন করে।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই জীবনযাত্রা হবে শূন্য কার্বনের ওপর ভিত্তি করে যেখানে কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি থাকবে না, শুধুমাত্র পুনঃনবায়নযোগ্য শক্তি থাকবে। এতে এমন একটি অর্থনীতি হবে যা প্রাথমিকভাবে সামাজিক ব্যবসার মতো ব্যক্তিগত পর্যায়ে শূন্য মুনাফার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে।
সামাজিক ব্যবসাকে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নন-ডিভিডেন্ড ব্যবসা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসার একটি বিশাল অংশ পরিবেশ ও মানবজাতির সুরক্ষায় মনোযোগ দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবন কেবল সুরক্ষিতই হবে না, গুণগতভাবে উন্নত হবে। এটি যুবকদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সহজতর করবে। উদ্যোক্তা হওয়ার নতুন শিক্ষার মাধ্যমে তরুণরা প্রস্তুত হবে। চাকরিপ্রার্থী তৈরির শিক্ষা উদ্যোক্তাকেন্দ্রিক শিক্ষা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।’

পরিবেশের সুরক্ষার জন্য একটি নতুন জীবনধারার প্রয়োজন উল্লেখ করে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, নতুন জীবনধারা চাপিয়ে দেয়া হবে না, এটি হবে পছন্দ করে বেছে নেয়া। তিনি বলেন, প্রতিটি যুবক তিন শূন্যভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে এবং সারা জীবন তিন শূন্যভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে থাকবে। এটি নতুন সভ্যতা গড়ে তুলবে। এগুলো হচ্ছে- শূন্য নেট কার্বন নির্গমন, শুধুমাত্র সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলার মাধ্যমে শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে পরিণত করার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা করা যেতে পারে আমাদের যা করতে হবে তা হলো এ গ্রহের নিরাপত্তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন জীবনধারা গ্রহণ করা যেখানে সবাই বসবাস করে। আজকের তরুণ প্রজন্ম বাকিটা করবে। তারা তাদের আমাদের গ্রহকে ভালোবাসে। আমি আশা করি আপনারা এই স্বপ্ন দেখায় আমার সাথে যোগ দেবেন। আমরা যদি একসাথে স্বপ্ন দেখি তবে তা সম্ভব হবে।’

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে এবং সে কারণে মানবসভ্যতা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মানুষ আত্মবিধ্বংসী মূল্যবোধের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক ও যুবশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আত্মরক্ষাত্মক ও আত্ম-শক্তিবর্ধক একটি নতুন সভ্যতার গোড়া পত্তন করতে হবে।’
জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলন, কপ-২৯ এ যোগ দিতে সোমবার সন্ধ্যায় বাকুতে পৌঁছেন প্রধান উপদেষ্টা। আজ তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

নতুন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আহবান
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় এবং পৃথিবী ও মানুষের জন্য কল্যাণকর নতুন সভ্যতা গড়ার প্রচেষ্টায় বিশ্বের একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন।
গতকাল বুধবার জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সাথে এলডিসি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ ২৯ সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রুদ্ধদ্বার এ বৈঠকে পাঁচটি প্রধান জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ স্বল্পোন্নত দেশ- নেপাল, মালাউই, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া এবং বাংলাদেশের নেতারা যোগ দেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন ‘আমাদের একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো দরকার যা পৃথিবী এবং এর মানুষের জন্য কল্যাণকর।’ একইসাথে বিশ্বের তরুণদের জন্য একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরির লক্ষ্যে জাতিসঙ্ঘের পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া সম্মেলন ‘সামিট ফর দ্য ফিউচার’ এর সমর্থন জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা এমন অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করেছি যার মূল হচ্ছে ভোগ, ভোগ এবং ভোগ। এটি শুধু বর্জ্য, বর্জ্য এবং বর্জ্য তৈরি করে। আমাদেরকে শূন্য বর্জ্যের বিশ্ব তৈরি করতে হবে।’
প্রতি বছর কপ জলবায়ু সম্মেলন করা উচিত নয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বের কী প্রয়োজন তা আমরা জানি এবং এর জন্য আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা উচিত। এটি দেশ অনুযায়ী হওয়া উচিত। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি (বর্জ্য) নিরসনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।’ তার মতে, আমাদের প্রতি বছর এখানে দেখা করার দরকার নেই। প্রতি বছর আলোচনার জন্য মিটিং করা সময়সাপেক্ষ, অপচয় এবং অপমানজনক। তিনি জলবায়ু আলোচনার জন্য একটি নতুন পদ্ধতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমান পদ্ধতিটি বিশ্বের বেশির ভাগ চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বড় অবিচারের সম্মুখীন হয়েছে। আমরা আপনাদের বলতে চাই যে, আমরা আপনাদের বিষয়ে গুরুত্ব দেই। গুতেরেস বলেন, জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনের জন্য একটি বৃহত্তর তহবিল সুরক্ষিত করার জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে কঠোর আলোচনা এবং ‘গুরুতর প্রক্রিয়া’ তৈরি করতে হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

কপ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ড. ইউনূস

পৃথিবীর সুরক্ষায় ৩ শূন্যের জীবনধারা গড়তে হবে

আপডেট সময় ০১:২৯:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

ডেস্ক নিউজ :

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন।
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে গতকাল কপ২৯-এর ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন। ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সভ্যতা এখন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ আমরা আত্মবিধ্বংসী মূল্যবোধ প্রচার করছি। একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের জন্য আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, অর্থনৈতিক এবং তারুণ্যের শক্তিকে একত্রিত করতে হবে; একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান সভ্যতা তৈরি করতে হবে। আমরা এই গ্রহের মানবসন্তানরাই গ্রহের ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠেছি এবং আমরা স্বেচ্ছায় এ কাজ করছি। আমরা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছি, যা পরিবেশবান্ধব নয়। আর এর পেছনে যুক্তি হিসেবে আমরা অর্থনৈতিক অবকাঠামোর কথা বলি, যাকে দিন-রাত, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মতোই প্রাকৃতিক একটি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অথচ এই অর্থনৈতিক কাঠামো সীমাহীন ভোগের ওপর নির্ভরশীল। আপনি যত বেশি ভোগ করবেন, তত বড় হবেন। আপনি যত বড় হবেন, তত বেশি উপার্জন করবেন। সর্বোচ্চ মুনাফা আয়ই এই কাঠামোর ভিত্তি, যার মাধ্যমে এর ভেতর সবাই তাদের ভূমিকা পালন করে।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই জীবনযাত্রা হবে শূন্য কার্বনের ওপর ভিত্তি করে যেখানে কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি থাকবে না, শুধুমাত্র পুনঃনবায়নযোগ্য শক্তি থাকবে। এতে এমন একটি অর্থনীতি হবে যা প্রাথমিকভাবে সামাজিক ব্যবসার মতো ব্যক্তিগত পর্যায়ে শূন্য মুনাফার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে।
সামাজিক ব্যবসাকে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নন-ডিভিডেন্ড ব্যবসা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসার একটি বিশাল অংশ পরিবেশ ও মানবজাতির সুরক্ষায় মনোযোগ দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবন কেবল সুরক্ষিতই হবে না, গুণগতভাবে উন্নত হবে। এটি যুবকদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সহজতর করবে। উদ্যোক্তা হওয়ার নতুন শিক্ষার মাধ্যমে তরুণরা প্রস্তুত হবে। চাকরিপ্রার্থী তৈরির শিক্ষা উদ্যোক্তাকেন্দ্রিক শিক্ষা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।’

পরিবেশের সুরক্ষার জন্য একটি নতুন জীবনধারার প্রয়োজন উল্লেখ করে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, নতুন জীবনধারা চাপিয়ে দেয়া হবে না, এটি হবে পছন্দ করে বেছে নেয়া। তিনি বলেন, প্রতিটি যুবক তিন শূন্যভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে এবং সারা জীবন তিন শূন্যভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে থাকবে। এটি নতুন সভ্যতা গড়ে তুলবে। এগুলো হচ্ছে- শূন্য নেট কার্বন নির্গমন, শুধুমাত্র সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলার মাধ্যমে শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে পরিণত করার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা করা যেতে পারে আমাদের যা করতে হবে তা হলো এ গ্রহের নিরাপত্তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন জীবনধারা গ্রহণ করা যেখানে সবাই বসবাস করে। আজকের তরুণ প্রজন্ম বাকিটা করবে। তারা তাদের আমাদের গ্রহকে ভালোবাসে। আমি আশা করি আপনারা এই স্বপ্ন দেখায় আমার সাথে যোগ দেবেন। আমরা যদি একসাথে স্বপ্ন দেখি তবে তা সম্ভব হবে।’

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে এবং সে কারণে মানবসভ্যতা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মানুষ আত্মবিধ্বংসী মূল্যবোধের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক ও যুবশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আত্মরক্ষাত্মক ও আত্ম-শক্তিবর্ধক একটি নতুন সভ্যতার গোড়া পত্তন করতে হবে।’
জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলন, কপ-২৯ এ যোগ দিতে সোমবার সন্ধ্যায় বাকুতে পৌঁছেন প্রধান উপদেষ্টা। আজ তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

নতুন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আহবান
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় এবং পৃথিবী ও মানুষের জন্য কল্যাণকর নতুন সভ্যতা গড়ার প্রচেষ্টায় বিশ্বের একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন।
গতকাল বুধবার জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সাথে এলডিসি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ ২৯ সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রুদ্ধদ্বার এ বৈঠকে পাঁচটি প্রধান জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ স্বল্পোন্নত দেশ- নেপাল, মালাউই, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া এবং বাংলাদেশের নেতারা যোগ দেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন ‘আমাদের একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো দরকার যা পৃথিবী এবং এর মানুষের জন্য কল্যাণকর।’ একইসাথে বিশ্বের তরুণদের জন্য একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরির লক্ষ্যে জাতিসঙ্ঘের পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া সম্মেলন ‘সামিট ফর দ্য ফিউচার’ এর সমর্থন জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা এমন অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করেছি যার মূল হচ্ছে ভোগ, ভোগ এবং ভোগ। এটি শুধু বর্জ্য, বর্জ্য এবং বর্জ্য তৈরি করে। আমাদেরকে শূন্য বর্জ্যের বিশ্ব তৈরি করতে হবে।’
প্রতি বছর কপ জলবায়ু সম্মেলন করা উচিত নয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বের কী প্রয়োজন তা আমরা জানি এবং এর জন্য আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা উচিত। এটি দেশ অনুযায়ী হওয়া উচিত। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি (বর্জ্য) নিরসনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।’ তার মতে, আমাদের প্রতি বছর এখানে দেখা করার দরকার নেই। প্রতি বছর আলোচনার জন্য মিটিং করা সময়সাপেক্ষ, অপচয় এবং অপমানজনক। তিনি জলবায়ু আলোচনার জন্য একটি নতুন পদ্ধতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমান পদ্ধতিটি বিশ্বের বেশির ভাগ চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বড় অবিচারের সম্মুখীন হয়েছে। আমরা আপনাদের বলতে চাই যে, আমরা আপনাদের বিষয়ে গুরুত্ব দেই। গুতেরেস বলেন, জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনের জন্য একটি বৃহত্তর তহবিল সুরক্ষিত করার জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে কঠোর আলোচনা এবং ‘গুরুতর প্রক্রিয়া’ তৈরি করতে হবে।