কক্সবাজার ১২:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
উত্তরায় বিধ্বস্ত

এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানের আদ্যোপান্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা :
  • আপডেট সময় ০৮:৪৬:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
  • / ৬ বার পড়া হয়েছে
ডেস্ক নিউজ:

এফ-৭ বিজিআই চীনে তৈরি একটি যুদ্ধবিমান। মূলত এফ-৭ সিরিজের একটি উন্নত সংস্করণ হলো এফ-৭ বিজিআই। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের আদলে তৈরি করা হয় এই এফ-৭—যা চীনে চেংদু জে-৭ নামেও পরিচিত।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহরে শুরু থেকে এফ-৭ যুদ্ধবিমান যুক্ত করা হয়। আকাশ থেকে আকাশে যুদ্ধ, আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণ এবং প্রশিক্ষণ ও টহলের জন্য এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়।

অ্যারো কর্নারের তথ্য অনুযায়ী, এফ-৭ যুদ্ধবিমান চীনের তৈরি এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট হালকা ও গতিশীল ফাইটার জেট এবং এটি বিশ্বের বহু দেশের বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত হয়েছে। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সের (পিএফএএএফ) প্রয়োজন মেটাতেই এফ-৭-এর ডিজাইন ও উন্নয়ন শুরু হয়।

২০১৩ সালের মে মাসে এফ-৭ এর উৎপাদন বন্ধ হয়। তবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশরসহ একাধিক দেশে এই যুদ্ধবিমান ব্যবহৃত হচ্ছে।

এফ-৭ একটি অল-ওয়েদার ইন্টারসেপ্টর, অর্থাৎ যেকোনো আবহাওয়ায় যুদ্ধ করতে সক্ষম। ডেল্টা আকৃতির পাখা এটিকে দ্রুত উঁচুতে ও শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে উড়তে সাহায্য করে। তবে যুদ্ধবিমানটির সীমিত রেঞ্জের কারণে এটি মূলত পয়েন্ট-ডিফেন্স (সীমিত অঞ্চলে প্রতিরক্ষা) মিশনের জন্য বেশি কার্যকর।

ওয়ারথান্ডারের তথ্য অনুযায়ী, এফ-৭ বিজিআই হলো চীনের তৈরি এফ-৭ সিরিজের সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ। এটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জন্য বিশেষভাবে উন্নত করা হয়। অস্থায়ী সমাধান হিসেবে বাংলাদেশ এগুলো কিনেছিল—যতদিন না বিএএফের বহরে আধুনিক এক-ইঞ্জিনবিশিষ্ট মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান যুক্ত হয়। এই সংস্করণটি ছিল জে-৭ সিরিজের শেষ উৎপাদিত যুদ্ধবিমান এবং এর শেষ ইউনিটটি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে সরবরাহ করা হয়।

এফ-৭ বিজিআইতে আগের সংস্করণগুলোর তুলনায় ককপিটে অনেক আধুনিকায়ন করা হয়। দুটি মাল্টিফাংশন ডিসপ্লে (এএফডি) যুক্ত করা হয়। এতে রয়েছে এইচওটিএএস (Hands On Throttle And Stick) প্রযুক্তি, যা পাইলটকে যুদ্ধবিমান পরিচালনায় বাড়তি সুবিধা দেয়। নতুন এইচইউডি (Head-Up Display) যুক্ত হয়। পাইলটদের জন্য হেলমেট-মাউন্টেড সাইট (এইচএমএস) ও নাইট ভিশন সরঞ্জাম যোগ করা হয়েছে।

এ ছাড়া, এতে মুভিং ম্যাপ জিপিএস এবং ন্যাভিগেশন ও বোমার্ডমেন্ট সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পাইলটের সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয় মার্টিন বেকার এমকে.১০ ইজেকশন সিট, যা জরুরি মুহূর্তে দ্রুত নিরাপদভাবে পাইলটকে যুদ্ধবিমানের বাইরে নিয়ে যেতে সহায়তা করে।

এফ-৭ বিজিআইসহ এই সিরিজের যুদ্ধবিমানগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের আকাশ প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যদিও এটি এখন কিছুটা পুরনো প্রযুক্তির, তবে প্রশিক্ষণ ও সীমিত যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য এখনো কার্যকর।

এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য

ইঞ্জিন: এটি একটি ইঞ্জিন বিশিষ্ট বিমান। এতে ডব্লিউপি-১৩এফ (WP-13F) আফটারবার্নিং টার্বোজেট ইঞ্জিন রয়েছে।

সর্বোচ্চ গতি: এটি মাক ২.২ (Mach 2.2) বা ঘণ্টায় প্রায় ২,৪৭০ কি.মি. গতিতে উড়তে সক্ষম।

রেঞ্জ: এর ফেরি রেঞ্জ (ফেরত যাওয়ার ক্ষমতাসহ) প্রায় ২,০০০ কি.মি.। এটি এয়ার-টু-এয়ার মিশন চালাতে পারে। আবার লেজার গাইডেড বোমা বা রকেট দিয়ে স্থল টার্গেটেও আঘাত করতে পারে।

অস্ত্র: এফ-৭ বিজিআই বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র বহন করতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে- পিএল-৫, পিএল-৯ ইনফ্রারেড গাইডেড মিসাইল। ৩০ মিমি কামান। ফ্রি-ফল বোমা। রকেট পড। এটি লেজার গাইডেড বোমা (যেমন: Mk 81, Mk 82-এর জন্য TEBER গাইডেন্স কিট), জিপিএস গাইডেড বোমা এবং ৩০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত সাসপেন্ডেড আরমামেন্ট বহন করতে পারে।

রাডার: এতে কেএলজে-৬এফ (KLJ-6F) পালস ডপলার রাডার ব্যবহার করা হয়, যা ৮০ কিমি+ রেঞ্জ কাভার করে।

ককপিট: এর ককপিট আধুনিক ‘গ্লাস ককপিট’; যেখানে মাল্টিফাংশন ডিসপ্লে এবং হ্যান্ডস অন থ্রটল অ্যান্ড স্টিক সিস্টেম রয়েছে।

সীমিত বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ (BVR) যুদ্ধক্ষমতা: আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোর তুলনায় এর বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ যুদ্ধক্ষমতা সীমিত। বলা হয়ে থাকে, এটি অধিকাংশ মিগ-২১ এবং অনেক সমসাময়িক যুদ্ধবিমানের তুলনায় বেশি ম্যানুভারেবল।

এফ-৭ বিজিআই-এর সীমাবদ্ধতা

দৃষ্টিসীমার বাইরে আঘাত হানতে সক্ষম (Beyond Visual Range) ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে না। শুধু স্বল্প-পাল্লার ইনফ্রারেড গাইডেড মিসাইল (PL-5, PL-7, সম্ভবত PL-9) বহন করতে পারে। ফলে, শত্রু বিমানকে দূর থেকে ধ্বংস করার সক্ষমতা নেই।

এটি পুরনো নকশা ভিত্তিক বিমান। মিগ-২১ এর ১৯৫০–৬০-এর দশকের ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। যদিও আধুনিকায়িত (ডাবল ডেল্টা উইং) তবুও এটির এরোডাইনামিক পারফরম্যান্স আধুনিক চতুর্থ প্রজন্মের জেটের তুলনায় পিছিয়ে।

এটি সর্বোচ্চ ৩,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত বোমা/রকেট বহন করতে পারে, যা আধুনিক অনেক যুদ্ধবিমান যেমন জেএফ-১৭ থান্ডার এবং রাফায়েলের তুলনায় অনেক কম, যারা ৬,০০০–৯,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত অস্ত্র বহন করতে পারে।

এর কেএলজে-৬এফ রাডার ভালো হলেও, আধুনিক এইএসএ রাডার বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-সহ সেন্সর সিস্টেমের চেয়ে পিছিয়ে।

ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার, জ্যামিং বা সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্সের দিক থেকে দুর্বল।

একমাত্র ইঞ্জিনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটির সময় বিকল্প ইঞ্জিন না থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে এফ-৭ বিজিআই

১৯৮০’র দশকে বাংলাদেশ এফ-৭ এমবি যুদ্ধবিমান দিয়ে চীনের তৈরি এফ-৭ সিরিজ ব্যবহার শুরু করে। এরপর ২০০৬–২০০৮ সালে আরও আধুনিক এফ-৭বিজি যুক্ত হয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আরো উন্নত প্রযুক্তি ও মাল্টি-রোল সক্ষমতা চাহিদা পূরণে আসে এফ-৭বিজিআই।

২০১১ সালে চীনের চেংডু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের সাথে এফ-৭ বিজিআই সরবরাহের চুক্তি হয়। ২০১৩ সালের মধ্যে সবগুলো বিমান বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। তার মধ্যে একটি বিমান সোমবার বিধ্বস্ত হলো। যাতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

উত্তরায় বিধ্বস্ত

এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানের আদ্যোপান্ত

আপডেট সময় ০৮:৪৬:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
ডেস্ক নিউজ:

এফ-৭ বিজিআই চীনে তৈরি একটি যুদ্ধবিমান। মূলত এফ-৭ সিরিজের একটি উন্নত সংস্করণ হলো এফ-৭ বিজিআই। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের আদলে তৈরি করা হয় এই এফ-৭—যা চীনে চেংদু জে-৭ নামেও পরিচিত।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহরে শুরু থেকে এফ-৭ যুদ্ধবিমান যুক্ত করা হয়। আকাশ থেকে আকাশে যুদ্ধ, আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণ এবং প্রশিক্ষণ ও টহলের জন্য এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়।

অ্যারো কর্নারের তথ্য অনুযায়ী, এফ-৭ যুদ্ধবিমান চীনের তৈরি এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট হালকা ও গতিশীল ফাইটার জেট এবং এটি বিশ্বের বহু দেশের বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত হয়েছে। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সের (পিএফএএএফ) প্রয়োজন মেটাতেই এফ-৭-এর ডিজাইন ও উন্নয়ন শুরু হয়।

২০১৩ সালের মে মাসে এফ-৭ এর উৎপাদন বন্ধ হয়। তবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশরসহ একাধিক দেশে এই যুদ্ধবিমান ব্যবহৃত হচ্ছে।

এফ-৭ একটি অল-ওয়েদার ইন্টারসেপ্টর, অর্থাৎ যেকোনো আবহাওয়ায় যুদ্ধ করতে সক্ষম। ডেল্টা আকৃতির পাখা এটিকে দ্রুত উঁচুতে ও শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে উড়তে সাহায্য করে। তবে যুদ্ধবিমানটির সীমিত রেঞ্জের কারণে এটি মূলত পয়েন্ট-ডিফেন্স (সীমিত অঞ্চলে প্রতিরক্ষা) মিশনের জন্য বেশি কার্যকর।

ওয়ারথান্ডারের তথ্য অনুযায়ী, এফ-৭ বিজিআই হলো চীনের তৈরি এফ-৭ সিরিজের সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ। এটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জন্য বিশেষভাবে উন্নত করা হয়। অস্থায়ী সমাধান হিসেবে বাংলাদেশ এগুলো কিনেছিল—যতদিন না বিএএফের বহরে আধুনিক এক-ইঞ্জিনবিশিষ্ট মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান যুক্ত হয়। এই সংস্করণটি ছিল জে-৭ সিরিজের শেষ উৎপাদিত যুদ্ধবিমান এবং এর শেষ ইউনিটটি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে সরবরাহ করা হয়।

এফ-৭ বিজিআইতে আগের সংস্করণগুলোর তুলনায় ককপিটে অনেক আধুনিকায়ন করা হয়। দুটি মাল্টিফাংশন ডিসপ্লে (এএফডি) যুক্ত করা হয়। এতে রয়েছে এইচওটিএএস (Hands On Throttle And Stick) প্রযুক্তি, যা পাইলটকে যুদ্ধবিমান পরিচালনায় বাড়তি সুবিধা দেয়। নতুন এইচইউডি (Head-Up Display) যুক্ত হয়। পাইলটদের জন্য হেলমেট-মাউন্টেড সাইট (এইচএমএস) ও নাইট ভিশন সরঞ্জাম যোগ করা হয়েছে।

এ ছাড়া, এতে মুভিং ম্যাপ জিপিএস এবং ন্যাভিগেশন ও বোমার্ডমেন্ট সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পাইলটের সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয় মার্টিন বেকার এমকে.১০ ইজেকশন সিট, যা জরুরি মুহূর্তে দ্রুত নিরাপদভাবে পাইলটকে যুদ্ধবিমানের বাইরে নিয়ে যেতে সহায়তা করে।

এফ-৭ বিজিআইসহ এই সিরিজের যুদ্ধবিমানগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের আকাশ প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যদিও এটি এখন কিছুটা পুরনো প্রযুক্তির, তবে প্রশিক্ষণ ও সীমিত যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য এখনো কার্যকর।

এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য

ইঞ্জিন: এটি একটি ইঞ্জিন বিশিষ্ট বিমান। এতে ডব্লিউপি-১৩এফ (WP-13F) আফটারবার্নিং টার্বোজেট ইঞ্জিন রয়েছে।

সর্বোচ্চ গতি: এটি মাক ২.২ (Mach 2.2) বা ঘণ্টায় প্রায় ২,৪৭০ কি.মি. গতিতে উড়তে সক্ষম।

রেঞ্জ: এর ফেরি রেঞ্জ (ফেরত যাওয়ার ক্ষমতাসহ) প্রায় ২,০০০ কি.মি.। এটি এয়ার-টু-এয়ার মিশন চালাতে পারে। আবার লেজার গাইডেড বোমা বা রকেট দিয়ে স্থল টার্গেটেও আঘাত করতে পারে।

অস্ত্র: এফ-৭ বিজিআই বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র বহন করতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে- পিএল-৫, পিএল-৯ ইনফ্রারেড গাইডেড মিসাইল। ৩০ মিমি কামান। ফ্রি-ফল বোমা। রকেট পড। এটি লেজার গাইডেড বোমা (যেমন: Mk 81, Mk 82-এর জন্য TEBER গাইডেন্স কিট), জিপিএস গাইডেড বোমা এবং ৩০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত সাসপেন্ডেড আরমামেন্ট বহন করতে পারে।

রাডার: এতে কেএলজে-৬এফ (KLJ-6F) পালস ডপলার রাডার ব্যবহার করা হয়, যা ৮০ কিমি+ রেঞ্জ কাভার করে।

ককপিট: এর ককপিট আধুনিক ‘গ্লাস ককপিট’; যেখানে মাল্টিফাংশন ডিসপ্লে এবং হ্যান্ডস অন থ্রটল অ্যান্ড স্টিক সিস্টেম রয়েছে।

সীমিত বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ (BVR) যুদ্ধক্ষমতা: আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোর তুলনায় এর বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ যুদ্ধক্ষমতা সীমিত। বলা হয়ে থাকে, এটি অধিকাংশ মিগ-২১ এবং অনেক সমসাময়িক যুদ্ধবিমানের তুলনায় বেশি ম্যানুভারেবল।

এফ-৭ বিজিআই-এর সীমাবদ্ধতা

দৃষ্টিসীমার বাইরে আঘাত হানতে সক্ষম (Beyond Visual Range) ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে না। শুধু স্বল্প-পাল্লার ইনফ্রারেড গাইডেড মিসাইল (PL-5, PL-7, সম্ভবত PL-9) বহন করতে পারে। ফলে, শত্রু বিমানকে দূর থেকে ধ্বংস করার সক্ষমতা নেই।

এটি পুরনো নকশা ভিত্তিক বিমান। মিগ-২১ এর ১৯৫০–৬০-এর দশকের ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। যদিও আধুনিকায়িত (ডাবল ডেল্টা উইং) তবুও এটির এরোডাইনামিক পারফরম্যান্স আধুনিক চতুর্থ প্রজন্মের জেটের তুলনায় পিছিয়ে।

এটি সর্বোচ্চ ৩,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত বোমা/রকেট বহন করতে পারে, যা আধুনিক অনেক যুদ্ধবিমান যেমন জেএফ-১৭ থান্ডার এবং রাফায়েলের তুলনায় অনেক কম, যারা ৬,০০০–৯,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত অস্ত্র বহন করতে পারে।

এর কেএলজে-৬এফ রাডার ভালো হলেও, আধুনিক এইএসএ রাডার বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-সহ সেন্সর সিস্টেমের চেয়ে পিছিয়ে।

ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার, জ্যামিং বা সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্সের দিক থেকে দুর্বল।

একমাত্র ইঞ্জিনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটির সময় বিকল্প ইঞ্জিন না থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে এফ-৭ বিজিআই

১৯৮০’র দশকে বাংলাদেশ এফ-৭ এমবি যুদ্ধবিমান দিয়ে চীনের তৈরি এফ-৭ সিরিজ ব্যবহার শুরু করে। এরপর ২০০৬–২০০৮ সালে আরও আধুনিক এফ-৭বিজি যুক্ত হয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আরো উন্নত প্রযুক্তি ও মাল্টি-রোল সক্ষমতা চাহিদা পূরণে আসে এফ-৭বিজিআই।

২০১১ সালে চীনের চেংডু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের সাথে এফ-৭ বিজিআই সরবরাহের চুক্তি হয়। ২০১৩ সালের মধ্যে সবগুলো বিমান বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। তার মধ্যে একটি বিমান সোমবার বিধ্বস্ত হলো। যাতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।